মোঃ ফারুক হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার জাদুঘরের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন ওয়ার্ল্ড হেড়িটেজ নীতিমালা উপেক্ষা করে মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিমার্নাধীন দ্বিতল ভবনের কাজ বৌদ্ধবিহার কতৃপক্ষের অভিযোগে অবশেষে স্থগিত করেছে উপজেলা এলজিইডি কতৃপক্ষ।

বৌদ্ধ বিহার জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মোঃ ফজলুল করিম আরজু জানান, বাংলাদেশ সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত পুরাকীর্তি এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্বিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। সপ্তম- অষ্টম শতকের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও সভ্যতার স্বাক্ষী হয়ে আজ ও এই নিদর্শন দাঁড়িয়ে আছে এখানে।

এছাড়াও এখানে প্রাচীন মহামূল্যবান প্রত্নবস্তু সমৃদ্ধ আধুনিক একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর রয়েছে। প্রত্নস্থল ও জাদুঘর দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমণ ঘটে। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো কর্তৃপক্ষ এই বিহারটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত করেছে। ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত সকল প্রত্নস্থলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত আইনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হয়। প্রত্নস্থলসমূহ সংরক্ষণের জন্য ১৯৬৮ সালের (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) পুরাকীর্তি আইন প্রণীত হয়। উক্ত আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত পুরাকীর্তির নিকট কোন ভবন নির্মাণ, সৌন্দর্যহানী কিংবা কোন প্রকার ক্ষতি সাধন আইনত দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়াও বিশ্ব ঐতিহ্যের কেন্দ্রস্থল থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ ইউনেস্কো বিধিবিধান পরিপন্থী। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের খুব নিকটে কোরজোনের অভ্যন্তরে (দক্ষিণ-পূর্ব দিকে) এবং সত্যপীর ভিটা প্রত্নস্থলের সীমানা প্রাচীর ঘেষে মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ২০১৯ সালে উক্ত বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ আরম্ভ করলে নির্মাণ কাজ বন্ধের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, বদলগাছী নওগাঁকে পত্র প্রেরণ করা হলে তারা নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছিল।

বর্তমানে আবারও ঐ বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে গত ২৯ জানুয়ারি মহাপরিচালক, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ উক্ত দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র দেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ও অনুলিপি প্রদান করা হয়।

কিন্তু সেই পত্র উপেক্ষা করে দ্বিতল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রাচীর সংলগ্ন দ্বিতল ভবন নিমার্ন হলে বিশ্ব ঐতিহ্যের ইউনেস্কো ঘোষিত তালিকা থেকে পাহাড়পুর বাদ পড়ার শঙ্কা রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান স্কুল ভবনের দ্বিতল ভবনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১লা ফেব্রুয়ারি। এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোছাঃ আলপনা ইয়াসমিন এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান আমি বিষয়টি জানার পর কাজ বন্ধ করতে বলেছি উপজেলা প্রকৌশলীকে।